ভালোবাসা দিবসের ভাবনা
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসা দিবস। সবাই ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছেন একে অপরকে। এরকম দিবস প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। ক্ষমতা থাকলেও করতাম না। কারণ নিষিদ্ধ করার মধ্যে একরকম আধিপত্য আছে, সেটা মনুষ্যত্বের ক্ষতি করে। বরং দেশের মানুষ যাতে নিজ ঐতিহ্য-বিরোধী বা তার সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু পালন না করে সেজন্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচি থাকতে হয়। সেটা যে নেই, সে ব্যর্থতা তো তরুণদের নয়, রাজনীতিকদের। তাঁরা কাকে দোষ দিচ্ছেন?
উদাহরণ দেই : চার্চের ক্যালেন্ডার অনুসারে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘ফিস্ট ডে’ (বা খাদ্য উৎসব দিবস)। হয়তো পশ্চিমের দেশগুলোর কোনো গোঁড়া খ্রিস্টান গীর্জা এই দিবসটা পালন করে। কিন্তু বাংলাদেশে পালন তো দূরের কথা, উচ্চারণই করতে পারবে না। কারণ এখানে ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐতিহ্যের প্রকাশ্য রূপ। ২১ ফেব্রুয়ারি এখানে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। কোনো সরকার বা রাষ্ট্রকাঠামো বা জনগোষ্ঠী ‘ফিস্ট ডে’ নিষিদ্ধ করেনি। ওটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।
এরস্বাদের আমলে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মজিদ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মিছিলের উপর ট্রাক উঠিয়ে দেয় পুলিশ। মজিদ, জয়নাল, দিপালীসহ ১১ জন শিক্ষার্থী মারা যায় যার মধ্যে দিপালী নিষ্পাপ শিশু। একই দিনে আমরা পালন করছি ‘ভালোবাসা দিবস’, যেখানে আমাদের পালন করার কথা ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’।
অনেকেই দেখলাম গালি দিচ্ছেন শফিক রেহমানকে। তাঁর যায়যায়দিন পত্রিকা এই দিবসটার প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলে। কিন্তু যায়যায়দিন যদি পৃষ্ঠপোষকতা না করতো তবে কি এই দিবসটা এদেশে চালু হতো না? হতোই, যেমন চালু হয়ে গেছে বন্ধু দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস, গাছ দিবস, ফুল দিবস, পুরুষ দিবস, কবিতা দিবস, পাখি দিবস। ভালোমন্দ নির্বিশেষে গ্রহণ আর বর্জন চলতে থাকবে, এটাই সময়ের সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য। আর এই ইন্টারনেটের যুগে যেখানে নগদ টাকাপয়সা আটকে রাখতে পারা যায় না, সেখানে ধ্যান ধারণা, উৎসব এসব আটকে রাখবেন কীভাবে? আমার মাথায় ঢোকে না।
তাই আমি কারো পালনের বিরুদ্ধে না। শুধু আমি পালন করছি না। সাংস্কৃতিকভাবে এই স্বাতন্ত্র্য তো আমি আপনাদের কাছে দাবি করতেই পারি। নাকি?