Sholmari River (শোলমারি নদী)

 
শোলমারি ও পশুর নদীর মিলনস্থল; বটিয়াঘাটা, খুলনা
আঙ্গুরবালা, নদীনালা দেখাশোনার দায়িত্ব শেখ রোকন ভাইয়ের। কিন্তু আমার যে নদী ভালো লাগে, কী আর করবো? তোমাকে তো আগে দেখিয়েছি আমার ভালোবাসার চিত্রা আর মধুমতি নদী দুটোকে। আমি বেঁচে আছি কারণ সেই ছোট্টবেলায় প্রমত্তা কচা নদী গোত্রসহ আমাদেরকে মেরে ফেলেনি। সেই ছোট্ট ডিঙিটা বিপুল ঢেউয়ের মাথায় লাফাতে লাফাতে, ঘোলাজল খেতে খেতে আমাদেরকে পার করে দিয়েছিলো বালিপাড়া থেকে ওপারের তেলিখালীতে। সে এক লম্বা গল্প, হুমায়ুন আহমেদের ‘সে এক বিরাট কাহিনী...’ দিয়ে শুরু করার মতো।

তোমাকে যে পশুর নদের কথা বলেছিলাম, তার শুরু ওই পূবদিকের দিগন্তে যে নদটা দেখা যায় সেখান থেকে। এখানে অবশ্য ওর নাম কাজীবাছা। কাজীবাছাও কিন্তু মূল নাম না, মূল নাম ছিলো কাচিকাটা। নামেরও মুসলমানি হয় তো! তারই জেরে ওর নাম পাল্টে কাজীবাছা হয়ে গেছে। আমার ডানতীরে বটিয়াঘাটা উপজেলা শহর, বামদিকে খুলনা নগরী, যার পিঠে চড়ে আমি বড়ো হয়েছি।

ওর উত্তরে খুলনা শহরের পুবপাশ ঘেঁষে চলা রূপসা নদী। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেই নদীটাকে বলা হয় শোলমারি। আমার সামনে পূবদিকে সেটা মিশেছে পশুরের সাথে। আমার পেছন দিকটায় সালতা নদী উত্তর দিক থেকে এসে মিশেছে শোলমারিতে। শোলমারি তারপর একটু উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে দক্ষিণ দিকে রওনা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাবে বলে। কিন্তু একা একা যাবে বললেই তো হবে না! মাইল দুয়েক যাবার পরই পশ্চিমে ডুমুরিয়ার দিক থেকে এসে ভদ্রা মিলেছে তার সঙ্গে। যেন বলছে, চল, এবার দু’জন মিলেই রওনা দি।

এবার দু’জনের যৌথনাম ভদ্রা। এখন ভদ্রায় পলি জমে মৃতপ্রায়। কিন্তু একসময়ে খুলনা থেকে পাইকগাছা যাবার গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ছিলো ভদ্রা নদী। তুমি যদি এখান থেকে ভদ্রার স্রোতধারা ধরে এগোও, তাহলে মাইলমারা, আউশখালী, গাওঘরা, সুরখালী পেরিয়ে একটানে চলে যাবে বারোআড়িয়া বাজারের সামনে। এখানে ভদ্রা, বুড়িভদ্রা, নাইনখালী ও শ্যাংরাইল নদী মিশেছে এক জায়গায়।

এবার শ্যাংরাইল ধরে একটুখানি এগোলেই পাবে শিবসা নদী যে কিনা পশুর নদের সঙ্গে মিলে জন্ম দিয়েছে বিপুল-বিশাল কুঙ্গা নদীর। এবার শিবসা নদীটাও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা পরিবহণের নৌপথ হিশেবে নিয়ে নেয়া হয়েছে। আকরাম পয়েন্ট থেকে জাহাজগুলো শিবসা নদী বেয়ে উঠে আসছে দাকোপের কালীনগর পর্যন্ত। তারপর ডানদিকে ঢাকী নদী ধরে পৌঁছে যাচ্ছে চালনায়। নোঙর করে থাকছে সেই জায়গাতে যেটা বাতিল করে দেয়া হয়েছিলো ১৯৫৩ সালে।

বিরক্ত হয়ে যাবে বলে আর বলছি না এখন। আরেকদিন।