খনার বচন নিয়ে বচন
খনার বচন প্রথম কোথায় শুনেছিলাম, তোমার মনে আছে আঙ্গুরবালা? অবশ্যই আমার 'আপা' বা নানীর কাছে। ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে লম্বা বন্ধে আমরা যেতাম তাঁর কাছে। অনেকদিন থাকতাম। এ সময় কখনও বৃষ্টি হলেই তিনি বলে উঠতেন :
"যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ।"
আরো আরো শ্লোক বলতেন তিনি, কথায় কথায়। সিরিয়াস কোনো বিষয়ের উত্তর নিজে প্রায় দিতেনই না। শ্লোকগুলোই তার হয়ে উত্তর দিয়ে দিতো। নিজে কোনো সিদ্ধান্ত দিতেন না কিন্তু সবাই বুঝতো তিনি কী বলতে চান।
আমরা কী খাবো, কখন স্নান করবো, সবই ওই বচন ও শ্লোকগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। অাপা পৃথিবীতে নেই অনেক বছর। প্রায় এক যুগ। সেই শ্লোকগুলো আবার শুনবার কোনো সুযোগ নেই। খুব ছোটবেলায় এসবের কিছুই বুঝতাম না, সে তো তুমি জানো। ছন্দটা ছাড়া আর সবকিছুই অর্থহীন লাগতো। কখনও বিরক্ত হয়েছি কি না মনে নেই। মাও গুটিকয়েক শ্লোক বলতেন, তবে তার সঙ্গে খনার হয়তো কোনো সম্পর্ক নেই।
এরপরে সেই নিম্ন মাধ্যমিকে পড়ার সময় সেই যে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা প্রবন্ধ, সেটা প্রথমবারের মতো একটু একটু আনন্দ দিয়েছিলো। প্রবন্ধটার কঠিন কঠিন শব্দ আর বাক্য ছিলো খুবই অপছন্দের। কিন্তু পড়ানোর ফাকে হরিপদ স্যার খুলনার ভাষায় বললেন :
"ষোল চাষে মুলো, তার আদ্দেকে তুলো
তার আদ্দেকে ধান, বিনে চাষে পান।"
আর তখন খনা আর তার বচনগুলো ভালো লাগতে শুরু করলো। কিন্তু তা ও পর্যন্তই। চায়ের দোকানে দু-একবার খনার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব নিয়ে বাগ্গ্যুদ্ধ করা, আর গালগল্প শোনা। কখনওই খনা নামক নারীকে ঠিক ইতিহাসের অংশ বলে মনে হয়নি। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে, বিশেষত বচনগুলো সম্পর্কে সুপ্ত আগ্রহটা ছিলো সব সময়। সেটা একটু উস্কে দিয়েছিলেন Pavel Partha দা। ২০০৯ সালে Nurul Alam Masud ভাইয়ের আয়োজনে জলবায়ু ইজতেমায় (ক্লাইমেট ক্যাম্প) পাভেল দা প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন : "কী করো শ্বশুর লেখাজোখা, মেঘেই দেখ জলের রেখা..."
অমনি আমার মাথার মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে গেল। এই চ্যালেঞ্জটাই চাই! হয়তো আমি ভীতু কাপুরুষ চ্যালেঞ্জহীন মানুষ বলে এটা হতে পারে। কিন্তু আমার সেইদিনই প্রথম খনাকে একজন জ্যান্ত মানুষ বলে মনে হলো। আমি খনা নামক জ্ঞানী মানুষটাকে শ্রদ্ধা করতে শুরু করলাম। জানো, খনার যে নিয়তির লোককথা শোনা যায়, সেটাও কেমন যেন সত্য মনে হতে থাকলো।
তারপর খনার চারটে কথা কোথাও পেলেই লিখে রাখতে চাই। সিএসআরএল-এর সহযোগিতায় ২০১০ সাল থেকে গ্রামীণ জীবনযাত্রা মেলা আয়োজন করতে গিয়ে অনেক অনেক প্ল্যাকার্ড বানিয়েছি শুধু খনার বচন দিয়েই। জানি না সেগুলো সব খনার বচন কি না।
খনার বচন বলে যা যা চলে তার সব কি খনারই বচন? বিশ্বাস করো, এ প্রশ্ন আমার কোনোদিন মাথায়ই আসেনি। বাঙালি বা উড়িয়া বা অসমীয় এ প্রবাদগুলো যদি লোকজ প্রবাদই হয়, তবে তা আবার যাচাই-বাছাই করা যায়, সেটা আমি ভাবিইনি। তুমিই ভাবালে তা, তুমিই জানালে আমায় খনার বচন বলে বাজারে যা আছে, তার সবই খনার বচন নয়।
খুলনার যে ছোট্ট বইমেলাটা হয়, তাতে ঢাকার দুটো অখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এসেছে। চারশো প্রকাশনার মধ্যে দুটো, বুঝেছো? বাকি সব বাজারের বইয়ের দোকানগুলোর স্টল। তাতে ৫০-৬০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে চটুল প্রেমের পদ্য, উঠতি উপন্যাস আর ধর্মকর্মের বই। আর আছে তোমার প্রিয় ফুচকা, চটপটি, কোমল পানীয়, নকুলদানা, মাখনা, বাদাম, ঘটি গরম, ঠাণ্ডা মালাই এইসব। সব মিলেমিশে একাকার।
তার মধ্যেই পেয়ে গেলাম এই বইটা। আত্মজা যখন প্রকৃত বচনের অভিসন্দর্ভটা পড়বে আর খুঁজবে আরো কিছু বই, সেদিন কি কাগজে ছাপা বই থাকবে? কেমন বই তার সব ইতিবৃত্ত এখনও জানি না। সেদিন তার হাতে তুলে দেবো আরো ক' খানা, সে প্রতীতি জন্মেছে আজ।
কী নাম তার? খনা নাকি নয়নজুলি?
"যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ।"
আরো আরো শ্লোক বলতেন তিনি, কথায় কথায়। সিরিয়াস কোনো বিষয়ের উত্তর নিজে প্রায় দিতেনই না। শ্লোকগুলোই তার হয়ে উত্তর দিয়ে দিতো। নিজে কোনো সিদ্ধান্ত দিতেন না কিন্তু সবাই বুঝতো তিনি কী বলতে চান।
আমরা কী খাবো, কখন স্নান করবো, সবই ওই বচন ও শ্লোকগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। অাপা পৃথিবীতে নেই অনেক বছর। প্রায় এক যুগ। সেই শ্লোকগুলো আবার শুনবার কোনো সুযোগ নেই। খুব ছোটবেলায় এসবের কিছুই বুঝতাম না, সে তো তুমি জানো। ছন্দটা ছাড়া আর সবকিছুই অর্থহীন লাগতো। কখনও বিরক্ত হয়েছি কি না মনে নেই। মাও গুটিকয়েক শ্লোক বলতেন, তবে তার সঙ্গে খনার হয়তো কোনো সম্পর্ক নেই।
এরপরে সেই নিম্ন মাধ্যমিকে পড়ার সময় সেই যে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা প্রবন্ধ, সেটা প্রথমবারের মতো একটু একটু আনন্দ দিয়েছিলো। প্রবন্ধটার কঠিন কঠিন শব্দ আর বাক্য ছিলো খুবই অপছন্দের। কিন্তু পড়ানোর ফাকে হরিপদ স্যার খুলনার ভাষায় বললেন :
"ষোল চাষে মুলো, তার আদ্দেকে তুলো
তার আদ্দেকে ধান, বিনে চাষে পান।"
আর তখন খনা আর তার বচনগুলো ভালো লাগতে শুরু করলো। কিন্তু তা ও পর্যন্তই। চায়ের দোকানে দু-একবার খনার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব নিয়ে বাগ্গ্যুদ্ধ করা, আর গালগল্প শোনা। কখনওই খনা নামক নারীকে ঠিক ইতিহাসের অংশ বলে মনে হয়নি। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে, বিশেষত বচনগুলো সম্পর্কে সুপ্ত আগ্রহটা ছিলো সব সময়। সেটা একটু উস্কে দিয়েছিলেন Pavel Partha দা। ২০০৯ সালে Nurul Alam Masud ভাইয়ের আয়োজনে জলবায়ু ইজতেমায় (ক্লাইমেট ক্যাম্প) পাভেল দা প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন : "কী করো শ্বশুর লেখাজোখা, মেঘেই দেখ জলের রেখা..."
অমনি আমার মাথার মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে গেল। এই চ্যালেঞ্জটাই চাই! হয়তো আমি ভীতু কাপুরুষ চ্যালেঞ্জহীন মানুষ বলে এটা হতে পারে। কিন্তু আমার সেইদিনই প্রথম খনাকে একজন জ্যান্ত মানুষ বলে মনে হলো। আমি খনা নামক জ্ঞানী মানুষটাকে শ্রদ্ধা করতে শুরু করলাম। জানো, খনার যে নিয়তির লোককথা শোনা যায়, সেটাও কেমন যেন সত্য মনে হতে থাকলো।
তারপর খনার চারটে কথা কোথাও পেলেই লিখে রাখতে চাই। সিএসআরএল-এর সহযোগিতায় ২০১০ সাল থেকে গ্রামীণ জীবনযাত্রা মেলা আয়োজন করতে গিয়ে অনেক অনেক প্ল্যাকার্ড বানিয়েছি শুধু খনার বচন দিয়েই। জানি না সেগুলো সব খনার বচন কি না।
খনার বচন বলে যা যা চলে তার সব কি খনারই বচন? বিশ্বাস করো, এ প্রশ্ন আমার কোনোদিন মাথায়ই আসেনি। বাঙালি বা উড়িয়া বা অসমীয় এ প্রবাদগুলো যদি লোকজ প্রবাদই হয়, তবে তা আবার যাচাই-বাছাই করা যায়, সেটা আমি ভাবিইনি। তুমিই ভাবালে তা, তুমিই জানালে আমায় খনার বচন বলে বাজারে যা আছে, তার সবই খনার বচন নয়।
খুলনার যে ছোট্ট বইমেলাটা হয়, তাতে ঢাকার দুটো অখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এসেছে। চারশো প্রকাশনার মধ্যে দুটো, বুঝেছো? বাকি সব বাজারের বইয়ের দোকানগুলোর স্টল। তাতে ৫০-৬০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে চটুল প্রেমের পদ্য, উঠতি উপন্যাস আর ধর্মকর্মের বই। আর আছে তোমার প্রিয় ফুচকা, চটপটি, কোমল পানীয়, নকুলদানা, মাখনা, বাদাম, ঘটি গরম, ঠাণ্ডা মালাই এইসব। সব মিলেমিশে একাকার।
তার মধ্যেই পেয়ে গেলাম এই বইটা। আত্মজা যখন প্রকৃত বচনের অভিসন্দর্ভটা পড়বে আর খুঁজবে আরো কিছু বই, সেদিন কি কাগজে ছাপা বই থাকবে? কেমন বই তার সব ইতিবৃত্ত এখনও জানি না। সেদিন তার হাতে তুলে দেবো আরো ক' খানা, সে প্রতীতি জন্মেছে আজ।
কী নাম তার? খনা নাকি নয়নজুলি?