ল্যাপটপের যন্ত্রণা

প্রথমে পিঠে ব্যথা, তারপর বুকে, শেষে হাত-পা, আবার পিঠে... কথা বলতে গিয়ে শুনি, আধুনিক মানুষেরা বিছানার উপরে বসে, কোলের উপরে ল্যাপটপ নিয়ে দিব্যি কাজ করে যায়। যন্ত্রটার আক্ষরিক অর্থও দাঁড়ায় ‘ক্রোড়পরি রক্ষিত যন্ত্র’। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? তুমি কী করে যে পারো!

আঙ্গুরবালা, আমার প্রথম ল্যাপটপের কথা মনে আছে তোমার? সেটা ছিলো একটা পুনর্ব্যবহৃত ল্যাপটপ, এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে কেনা। প্রায় ছয় বছর পর আমি সার্বক্ষণিক ডেস্কটপটা তখন মরহুম হয়ে গেছে। ল্যাপটপের দাম এত বেশি ছিলো যে নতুন কেনার কথা ভাবতেই পারতাম না। অথবা, তুমি অন্যভাবেও বলতে পারো : আমার আয় এত কম ছিলো যে ল্যাপটপের দোকানের দরোজা মাড়ানোর সাহস হতো না। জাপান থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ আসতো। সেগুলো মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে ঢুকতে শুরু করেছে সবে। চারখানা থান ইটের মতো তার আকার, ওজনও সেইরকম। মাঝেমাঝে স্ক্রিনটা ব্লু হয়ে যেতো, কতোগুলো দুর্বোধ্য সংকেত দিয়ে বন্ধ হয়ে যেতো নিজের খেয়ালখুশিমতো। পঁচিশ হাজার টাকায় কেনা সেই ল্যাপটপটা কয়েক বছর ধরে আমার একান্ত সঙ্গী হয়ে ছিলো।

আরেক ছোট ভাই Partho ওই ল্যাপটপটার জন্য একটা ঢাউস চটের ব্যাগ তৈরি করে দিয়েছিলো। রীতিমতো হাফাতে হাফাতে ওটা বয়ে বেড়াতাম আমি, যেমন শীতের দেশে তুমি বয়ে বেড়াও বিশাল ওভারকোট। ইচ্ছে করে না, কিন্তু উপায় নেই। সত্যি বলতে কী, বাড়ি ছেড়ে গেলেও কিছুটা কাজের স্বাধীনতা পেলাম আমি। কিন্তু যা হারালাম, তা হলো চাপমুক্ত থাকার স্বাধীনতা। নানারকম যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নিজস্ব যে ‘একাকী সময়’, যে নৈঃসঙ্গ একান্ত কাম্য প্রতিটি মানুষের - সেটাকে হারিয়েছি।

তেমনি হারিয়েছিলাম সেই ল্যাপটপটাকে। এক সন্ধ্যায় পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে ফিরে ল্যাপটপটাকে আর পাইনি। যেমন এখন পাই না তোমাকে।