স্বৈরাচারের নির্বাচন

আমাদের কৈশোর থেকে তারুণ্যের কালে এরস্বাদ নামক একটি শাসক ছিলো বাংলাদেশে। সে অনেকগুলো নির্বাচন করেছিলো। তার একটি দল ছিলো ‘জাতীয় পার্টি’ নামে। সেটি ছাড়া আর সবগুলোকে সে বলতো ‘বিজাতীয় পার্টি’। এরস্বাদের নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টির লোক ছাড়া কেউ প্রার্থী হতে পারতো না। ‘বিজাতীয়’রা প্রার্থী না হবার কারণে ‘জাতীয়’রা ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা’য় জিতে যেত। দু’-একজন ছ্যাচ্চড় ‘বিজাতীয়’ পার্টির লোক ‘জাতীয়’দের ফোন করে অনুমতি নিয়ে তারপর দাঁড়াতো এবং বিপুল ভোটে হারতো।

রাজনীতিকদের এই বলয়ের বাইরে আমাদের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী ছিলো। তারা ছিলো একইসঙ্গে রসিক ও শান্তিপ্রিয়। ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ ঠেকানো আর 'জাতীয়'দের লজ্জা দেয়ার জন্য তারা চাঁদা তুলে একজন প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিতো। সেই প্রার্থীদের সামাজিক পরিচয় হতো : ‘বেড়ে মুচি’, কওছার মাঝি, ‘কানু মেথর’ ইত্যাদি। তাতে জাতীয় নেতাটি লজ্জা না পেলেও ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ হতো না।

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কোথাও কোথাও জাতীয়দের অনুমতিতে বিজাতীয়রা প্রার্থী হয়েছেন। আর কোথাও কোনো বিরোধিতা সম্ভবত হচ্ছে না। হলে তো এত এত লোক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারতো না। আন্দাজ করি তিনটি কারণে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা' হচ্ছে :
১. দেশে এমন উন্নয়ন ঘটেছে যে আর কোনো ‘বেড়ে মুচি’, কওছার মাঝি, ‘কানু মেথর’ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
২. সাধারণ মানুষের রসিকতাবোধ কমে গেছে বা তারা খুব ব্যস্ত; এসব আজাইড়া কাজ করার সময় নেই।
৩. ‘বিজাতীয় পার্টি’র সব লোক এখন ‘জাতীয় পার্টি’ হয়ে গেছে। তারা আর ‘বিজাতীয়’ থাকতে চায় না।

আর কোনো কারণ যেন না দেখা দেয়, সেই কামনা করি।

ফি আমানিল্লাহ!