সৈয়দ মুজতবা আলী
বুঝেছো বুস, আমার মুর্শিদ সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি একইসঙ্গে সৈয়দ আমীন ভাই এবং উৎসর্গ রায়-এরও মুর্শিদ। মুর্শিদ বলেছিলেন, বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয় না। মুর্শিদ যে রসিক লোক ছিলেন সেটা কি আর বলে দিতে হবে? কৈশোরে তার রসগোল্লা গল্পটি পড়েছিলাম। ওইবারই ঝাণ্ডু দা আর তার সৃষ্টিকর্তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। বাবা (আমি কিন্তু আব্বা বলি) একবার ঢাকায় গিয়েছিলেন তখন। মানচিত্রের প্রহসনে আমাদের অঞ্চলের মানুষদের ঢাকায় যেতে হতো। তবে নিতান্ত গলায় গামছা না পরালে কেউ ঢাকামূখী হতো না।
তো, বাবাকে বলেছিলাম মুজতবা আলীর লেখা ‘হিটলার’ বইটা এনে দিতে। গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক বাধ্য হয়ে ঢাকার কর্তাদের কাছে যাচ্ছেন ধর্ণা দিতে, সেখানে বই কেনার ফুরসৎ যে একেবারেই নেই, সেটা তো আর তখন বুঝতাম না। খুব রাগ হয়েছিলো। কয়েকটা ফোরবি ও সিক্সবি পেন্সিল এনে দিয়ে সেবার বাবা আমার রাগ কমিয়েছিলেন।
যখন এসএসসি পাশ করে শহরে এলাম, তখনই প্রতিশোধ নিতে শুরু করে দিয়েছি। পাঠ্যবই কেনার টাকা দিয়ে অপাঠ্যবই কেনা শুরু করলাম। দোকানে মুজতবা আলীর বই দেখলে তো রক্ষাই নেই। প্রায় সবই পড়া হয়ে গেছে। শবনম পড়ে কেঁদেছি, চাচাকাহিনী পড়ে হাসতে হাসতে দাঁতের কপাট লেগে গেছে। দেশে বিদেশে পড়ে ভ্রমণকাহিনী কাকে বলে সেটা শিখেছি। সুনীল গাঙ্গুলীর ভূমিকাসহ একটা রচনাসমগ্র পেয়েছি হাতে, সেটাও পড়া হয়েছে। কিন্তু যখন জানলাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে একটা সংস্করণ বেরিয়েছে, সেটার জন্য আকুপাকু করছিলাম।
আজ এলো সেটা হাতে, বুঝেছো, এগারো খণ্ড। একদিন দু’জনে মিলে পড়া যাবে খুব। আঙ্গুরবালা হাত দিতে চাইলে আমরা দু’জন মিলে তাকে দূরে সরিয়ে দেবো। হাত দিতেই দেবো না!