চড়ুই ও ভালোবাসা

আঙ্গুরবালা, ধ্যাদ্দেড়ে গ্রামের বাজারে একটা দোতলা ভবনের দুইতলায় ছিলো আমার কাজের জায়গা। কাজের কক্ষটার উত্তরপাশের কক্ষটাতেই আমার বসবাস। এক ছুটির দিন দুপুরে শুয়ে শুয়ে কী একটা উপন্যাস পড়ছি। এমন সময় ফুরুৎ ফুরুৎ শব্দে একটা চড়ুই উড়তে লাগলো। জানলা দিয়ে ঢোকে আর সোজা ঘুলঘুলির ফোকরে গিয়ে কী যেন রেখে আসে। বারবার, শতেকবার। এক পর্যায়ে আমি বই রেখে ওকে দেখি। ভালো লাগে।

ধীরে ধীরে উঠে দরোজা বন্ধ করি। ওর আসা-যাওয়ার পথ বাদে বাকি জানলাগুলোও। তারপর ও ঘরে ঢোকার পর ওর ফেরার পথটাও বন্ধ করে দেই। তারপর কোনো লাঠি, দড়ি, কুলো, হাতা বাদে একেবারে খালি হাতে ওটাকে ধরতে যাই। ও পড়িমরি করে ওড়ে। আমি ওর পেছন পেছন ছুটি। কোনো কারণ নেই। আমার ধরতে ইচ্ছে করেছে। ওকে আমি একটু ধরে দেখতে চাই। আর কিছুই না।

চড়ুইটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কয়েকবার আমার হাতের ভেতর এসে পড়েও। কিন্তু ধরতে না ধরতেই ছুটে যায়। এক পর্যায়ে ওকে ধরে ফেলি। ওটা হাফায়। আমার হাতের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে। টেবিলের জলের জগ থেকে অনেক অনেকবার মুখে পানি দেই। কোনো কাজ হয় না। আমার কান্না পায়।

আমি আজও সেই দমবন্ধ করা, গলায় কান্না দলা পাকিয়ে আসা অনুভূতি ভুলতে পারিনি। তারপর আর জীবনে কোনোকিছু জোর করে পেতে চাইনি।