কুম্ভীলকবৃত্তি

ডেস্কটপ পাবলিকেশন ম্যাটেরিয়াল তৈরি করে জীবনেও আমি প্রশংসা পাইনি। ২০১২ সালে একটা পোস্টার তৈরির পর Masud ভাই প্রশংসা করেছিলেন। হয়তো তিনি পোস্টারটা ছেপেছিলেনও। তারপর একদিন ক্লাইমেট রিফিউজি নামক একটা গ্রুপে দেখলাম আমার তৈরি পোস্টারটা। কিন্তু নিচের লোগোদুটো কেটে দেয়া হয়েছে।

সত্যি ভীষণ রাগ হয়েছিলো। একটু কড়া ভাষায়ই জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার অনুমতি না নিয়ে কেন কপি পেস্ট করা হলো, এমনকি লোগোটাও না দিয়ে! ভয়াবহ উত্তর ছুটে এলো, 'আপনার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ হলে পাবলিক ডোমেইনে দিলেন কেন?' অনেকক্ষণ ধরে তর্ক করে হাল ছেড়ে দিলাম। এরা রবীন্দ্রনাথের লেখাও নিজ নামে ছেপে দিতে পারে। কুম্ভীলকের সঙ্গে বেশিক্ষণ কুতর্ক করা যায় না। তাতে নিজেকে তার মানে নেমে যেতে হয়।

এরপর বহুদিন নিজ কাজের কোনো ছবি ফেসবুকে দিতাম না। কিন্তু ধীরে ধীরে সহনক্ষমতার মধ্যে চলে এলো। আবার শুরু করলাম। এবার ঘটলো আমার ভাষান্তরিত লেখা হুবহু প্রকাশ করে দেয়ার কাজ। কিছু বললাম না। পরে কমেন্টের ঘরে শুধু লিখে দিয়ে এলাম, কাজটা আমার। তিনি হয়তো পরে কমেন্টটা মুছেও দিলেন, কেননা আমাকে পোস্টটা দেখা থেকেই বারিত করে দিলেন।

এবার জার্সি পরে মাঠে নামলো অনলাইন পত্রিকা। নিজের ওয়ালে লেখা কৃষি বিষয়ক নিতান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি সরাসরি ছেপে দিলো পত্রিকার পাতায়। মহামান্য সম্পাদক মহাশয়কে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কেন করলেন? তিনি বললেন, আপনার পাবলিক পোস্ট তো যে কেউই ছাপতে পারে। বিকৃত তো করিনি। তাঁকে কে বোঝাবে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর বাণিজ্যিক প্রচারমাধ্যেমর চারিত্র্যগত পার্থক্যই এই সীমারেখা টানে! সুতরাং চুপ গেলাম।

আরেকবার। গুরুতর এক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার চেয়ে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন প্লাটফরম আভাজে একটা আপীল লিখলাম। দু' দিনে সাড়ে সাত হাজারের মতো সাইন পড়লো। তৃতীয় দিন দেখি, হুবহু একই টেক্সট, একই গ্রাফিক্সসহ আরেকটি আপীল চলছে আভাজে। যিনি আপীলের কর্তা তিনি একটা বড়ো প্রতিষ্ঠানের প্রধান। ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও জানি তাঁকে। এই কুম্ভীলকবৃত্তি আন্তর্জাতিক কয়েক বন্ধুও জানলেন। কী আর করা?

কিছুদিন আগে নিকে চলা এক কবি আরেকটি পেইজে তাঁর কবিতা নকল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন। পেইজের অ্যাডমিন অজান্তির কারণে বিষয়টি ঘটেছে বলে ক্ষমা চাইলেন। তাতেও কবির জ্বালা কমলো না। বিষয়টি তিক্ততায় গিয়ে থামলো শেষে। ক'দিন পরে দেখি, সেই কবিই আরেকটি সাইট থেকে দিব্যি ছবি মেরে দিয়ে ফেঁদেছেন একখানি কবিতা। হা হতোস্মি!

তারপরও বেশ ঘন ঘন দেখছি এমন ঘটনা। প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছি। প্রকাশ্যে ঝগড়া করতে ভালো লাগে না। ফোন করে, ইনবক্সে জানাই। কাজ না হলে নাই। কী করবো? আনন্দ ছাড়া আর কোনো অনুভূতি নিতে কারোরই ভালো লাগার কথা না। তাই ভবিতব্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি।

কোনো আশা করি না আর। যদি কেউ আমার কোনো লেখা কপি করেন, কোনো ছবি নিয়ে প্রচার করেন, তাকে এটুকুই অনুরোধ করতে ইচ্ছে করে : হয় এমনভাবে ব্যবহার করবেন যাতে আমি দেখতে না পাই অথবা আমার নামটা একটু লিখিতভাবে স্মরণ করবেন। কারণ, আমি যদি নিজেকে স্বীকৃতিহীন দেখতে পাই তাহলে একটু কষ্ট লাগে আর কাজের স্পৃহাটা মরে যায়। একজন মানুষের কাজের স্পৃহা মেরে ফেলাটা খারাপ কাজ, ভাই!

এটুকু তো পারবেন। না?