রবিশঙ্কর বল

আঙ্গুরবালা, গত পাঁচদিন ধরে এক ধরনের অবিমিশ্র বিবমিষার মধ্য দিয়ে সঞ্চারণ করেছি। নিস্তব্ধতা আর নিষ্কর্মণ্যতার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে জীবন। আর দেখ, তারই মাঝে Alor Pathajatri চন্দ্রশেখর দা’র পোস্টে হঠাৎ দেখতে পাই রবিশঙ্কর বলের একটা গল্পের কঙ্কাল। বুকের মধ্যে ছ্যাঁৎ করে ওঠে। কোনো খারাপ খবর নয় তো?

নাগরিক জীবনের বৈদ্যুতিন জাল আর শতেক সদাইপাতির জঞ্জালে দেশীয় চটকদারি সংবাদ বাদে আর কিছুর দিকে নজর দেয়ার ফুরসৎ কেউই পায় না। দেয়ালের ওপারের ঘরে কোনো হরিপদ কেরানি মরে পড়ে আছেন কি না এপারের হরিপদ তার কোনো সন্দেশও জানে না। এই ছাপোষা কেরানির ক্ষেত্রেও কথাগুলো বাস্তব।

তাই আজ সকালেই আবার চন্দ্রশেখর দা’র সাথে যোগাযোগ করলাম। তিনি নিশ্চিত করলেন যে রবিশঙ্কর বল পরশুদিন রাতে মারা গেছেন। অনিরাময়যোগ্য ক্ষতি হয়ে গেল বাঙলা সাহিত্যের। হঠাৎ করে মনে হলো, রবিশঙ্কর বল, যাঁকে আমরা কেউই তেমন চিনি না, তাঁর মৃত্যুতে কী এমন ক্ষতি হলো সেটা বলাটা খুব জরুরি।

আমাদের তারুণ্যের কালে, যখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ি তখন, সুবিমল মিশ্র - রবিশঙ্কর বল - উৎপলকুমার বসু আর তাঁদের লেখাজোখা আমাদের জীবন আলোড়িত করতো। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা, উত্তরাধুনিকতা বা উল্টোগল্প (এন্টিগল্প) আমরা বাঙলায় বুঝতে চেষ্টা করতাম তাঁদের লেখার ভেতর দিয়ে।
কতোই আর বয়স হয়েছিলো? পঞ্চান্ন, আজকের শহুরে দুনিয়ায় এক যুবকের সমান বয়স। তবু মরে গেলেন তিনি। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়েছিলেন? “বধু শুয়ে ছিলো পাশে, শিশুটিও ছিলো - তবু সে দেখিলো কোন ভুত?”

এক একটা গল্প, বা লেখা, বা সাক্ষাৎকার আমাদেরকে নতুন দিকের দিশা দিতো। বন্ধু, সহপাঠী ও কবি Anup Chandal আমাদেরকে পড়ে শোনাতেন তাঁদের গল্প - প্রতিদিন। একজন সাহিত্যিকের কিংবা সমাজকর্মীর কেন রাজনীতি-সচেতন হতে হয় সেটা এক গল্প দিয়ে কে আর বোঝাবে আমাদেরকে?

এ পৃথিবীতে আর কোনোদিন দেখা হবে না রবিশঙ্কর বল। বিদায়!